আলকুশি বীজের উপকারিতা কি তা আজকের পোস্টের বিষয়বস্তু। আজকে আমরা জানবো আলকুশি সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য। এছাড়াও আলকুশি বীজের উপকারিতা, আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম, আলকুশি পাউডার এর অপকারিতা, আলকুশি পাউডার এর উপকারিতা সহ আলকুশি সম্পর্কে বিস্তার আলোচনা করবো এই পোস্টটির মাধ্যমে।
![]() |
আলকুশি বীজ ও পাউডার |
আলকুশি কি?
আলকুশি কী অনেকেই জানেন না। আলকুশি হচ্ছে Fabaceae পরিবারের একটি অন্যতম গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। আলকুশি শিম প্রজাতির একটি সদৃশ গাছ। আলকুশির গাছ দেখতে লতানো এবং এর ফল দেখতে শিমের মতো গায়ে কাটা কাটা জাতীয় অংশ থাকে। আলকুশির বীজ দেখতে শিমের বীজের মতই অনেকটা, তবে দেখলে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। আলকুশির এক একটি ফলে ৫ থেকে ৬ টা বীজ থাকতে পারে। এ বীজ শুকানোর পর যদি ১০০ টি ওজন করা হয় তাহলে ওজন হবে নূন্যতম ৫৫ থেকে ৮৫ গ্রাম এর মত।
আলকুশি গাছের ফলের গায়ে ছোট ছোট লোম সদৃশ বস্তু থাকে। তাছাড়া লতানো গাছের সব অংশেই এমন লোম বিদ্যমান। ভুলক্রমে যদি কোন অংশ আপনার শরীরের সংস্পর্শে আসে তাহলে সেখানে বেদনাদায়ক চুলকানি শুরু হবে। এটা যেহেতু বিড়ালের নখের খামচির মত লাগে। তাই আলকুশি আবার কোন কোন অঞ্চলের মানুষের কাছে আঞ্চলিক ভাষায় "বিলাই খামচি" নামেও পরিচিত। আলকুশির বৈজ্ঞানিক নাম হলো Mucuna pruriens। আলকুশি ইংরেজি নাম হলো Velvet bean। আলকুশি হচ্ছে Fabaceae পরিবারের একটি অন্যতম উদ্ভিদ।
আলকুশি বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
আলকুশির বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস এখানে দেওয়া হলো। আলকুশির জগতের নাম হলো Plantae, বিভাগের নাম হলো Magnoliophyta, শ্রেণীর নাম হলো Magnoliopsida, বর্গের নাম হলো Fabales, পরিবারের নাম হলো Fabaceae, উপপরিবারের নাম হলো Faboideae, গোত্রের নাম হলো Phaseoleae, গণ এর নাম হলো Mucuna এবং প্রজাতির নাম হলো M. pruriens।
আলকুশির উপকারিতা
- আলকুশি মূল বুকে জমে থাকা কফ দূরীকরণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- আলকুশির পাতা শাকের মতো রান্না করে খাওয়ার ফলে রক্তপিণ্ড থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়।
- ৪ গ্রাম বা ১ চামচ আলকুশি পাউডারে ফ্যাট থাকে ০.০১ গ্রাম যা শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে ব্যাপক ভুমিকা পালন করে।
- ৪ গ্রাম বা ১ চামচ আলকুশি পাউডারে কার্বোহাইড্রেট থাকে ৩.২৪ গ্রাম যা শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে ব্যাপক ভুমিকা পালন করে।
- ৪ গ্রাম বা ১ চামচ আলকুশি পাউডারে প্রোটিন থাকে ০.৩৪ গ্রাম যা শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে ব্যাপক ভুমিকা পালন করে।
- ৪ গ্রাম বা ১ চামচ আলকুশি পাউডারে ভিটামিন-সি থাকে ১৭ মিগ্রা যা শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণে ব্যাপক ভুমিকা পালন করে।
আলকুশি পাউডার এর উপকারিতা
আলকুশি পাউডার এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। আলকুশি পাউডার এর কিছু উপকারিতা দেওয়া হলো।
- উদ্বেগ চিকিৎসায় ওষুধ হিসাবে আলকুশি ব্যবহার করা হয়।
- বিষণ্নতা চিকিৎসায় ওষুধ হিসাবে আলকুশি ব্যবহার করা হয়।
- আমাশয় চিকিৎসায় ওষুধ হিসাবে আলকুশি ব্যবহার করা হয়।
- সাপের কামড় চিকিৎসায় ওষুধ হিসাবে আলকুশি ব্যবহার করা হয়।
- বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় ওষুধ হিসাবে আলকুশি ব্যবহার করা হয়।
- আলকুশি বীজের নির্যাস কাশি চিকিৎসায় ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
- আলকুশি বীজের নির্যাস ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
- আলকুশি বীজের নির্যাস ক্যান্সারের চিকিৎসায় ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
আলকুশি বীজের উপকারিতা
অনেকেই জানেন না আলকুশি বীজ খেলে কি হয়। এখানে কিছু আলকুশি বীজের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলো।
- মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে আলকুশি বীজ।
- অ্যান্টি-পারকিনসন প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করে আলকুশি বীজ।
- যৌনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যবহৃত হয় আলকুশি বীজ।
- বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণে ব্যবহৃত হয় আলকুশি বীজ।
- টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি করে আলকুশি বীজ।
- ক্যান্সার রোধ করে আলকুশি বীজ।
- টিউমারের বৃদ্ধি কমাতে পারে আলকুশি বীজ।
- ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে আলকুশি বীজ।
আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম
আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম হলো একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য প্রতি ৭ দিনে সর্বোচ্চ এক থেকে দুইবার ১৫ থেকে ২০ গ্রাম করে খাওয়া। তবে আপনি যদি প্রথম আলকুশি বীজ খেয়ে থাকেন তাহলে ৫ গ্রাম করে খেয়ে শুরু করতে পারেন তাহলেই আপনি আলকুশি বীজ চূর্ণ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বুঝতে পারবেন। এতে আপনার শরীরের সহনশীলতা বৃদ্ধি পাবে আস্তে আস্তে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার থেকে মুক্তি পাবেন। আলকুশি খাওয়ার নিয়ম ও উপায় রয়েছে তা নিচে তুলে ধরা হলো।
আলকুশি পাউডার | আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম
আলকুশি পাউডার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানবো এখন। আলকুশি বীজের পাউডার খাওয়ার নিয়ম এর প্রথমেই আলকুশি বীজ শোধন করার নিয়ম আলকুশি বীজ দুধের মধ্যে দিয়ে শোধন করে নিতে হবে। এরপর এটা শুকিয়ে গুড়ো করে পাউডার বানাতে হবে। এই আলকুশি পাউডার রুটি বানানোর সময় আটা বা ময়দার সাথে মিশিয়ে রুটি বানিয়ে খেতে পারেন। আবার আলকুশি পাউডার গরম দুধে মিশিয়ে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে দুধ না থাকলে আপনি পানি দিয়েই খেতে পারবেন।
আলকুশি বীজ
আলকুশি বীজ খাওয়ার নিয়ম হলো প্রথমে আলকুশি বীজ সিমের বীজের মতো রান্না করে নিবেন। এরপর আলকুশি বীজ রান্না হয়ে গেলে খেতে পারেন। আবার আপনি চাইলে আলকুশি বীজ সিদ্ধ করে সালাদ এর মতো করে খেতে পারেন। অথবা আপনি চাইলে ভেজে খেতে পারেন এতেও সমস্যা নেই।
আলকুশি ক্যাপসুল | আলকুশি ট্যাবলেট
বর্তমানে বাজারে ফুড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে আলকুশি ক্যাপসুল বা আলকুশি ট্যাবলেট পাওয়া যাচ্ছে। এই আলকুশি ক্যাপসুল অনেকেই সেবন করছেন। তবে আপনি যদি আলকুশি ক্যাপসুল খেতে চান তাহলে অবশ্যই ডাক্তার বা হাকিমের পরামর্শ গ্রহণ করে এরপর আলকুশি ক্যাপসুল গ্রহণ করবেন।
আলকুশি চা
আলকুশি পাউডার খাওয়ার নিয়ম এর মধ্যে অন্যতম হলো আলকুশি চা হিসেবে খাওয়া। এরজন্য প্রথমে গরম পানিতে চিনি ও দারুচিনি সহ আলকুশি পাউডার মিশিয়ে চা বানিয়ে নিতে হবে। তবে এতে চা-পাতা বা চা গুড়া ব্যবহার করা যাবে না। আলকুশি চা তৈরির জন্য ১ চা চামচ আলকুশি পাউডার, হাফ চা চামচ দারুচিনি এবং ১ চা চামচ চিনি গরম পানিতে দিয়ে ২ থেকে ৩ মিনিট মতো জ্বাল দিতে হবে। এরপর ২ কাপ আলকুশি চা খাওয়ার জন্য রেডি হয়ে যাবে আশা করা যায়।
আলকুশি + অশ্বগন্ধা
আলকুশি + অশ্বগন্ধা মিশিয়ে খেলে বিশেষ কিছু উপকারিতা পাওয়া যায়।
- আলকুশি + অশ্বগন্ধা বির্য গাঢ় করতে সাহায্য করে।
- আলকুশি + অশ্বগন্ধা মিলনে সময় বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- আলকুশি + অশ্বগন্ধা দ্রুত বীর্যপাত থেকে মুক্তি দিতে পারে।
- আলকুশি + অশ্বগন্ধা লিঙ্গ শৈথিল্য দূর করতে সাহায্য করতে পারে।
- আলকুশি + অশ্বগন্ধা ধাতু দূর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
- আলকুশি + অশ্বগন্ধা শুক্রানু বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে।
- আলকুশি + অশ্বগন্ধা স্নায়ুবিক দুর্বলতা দূরীকরণে বিশেষ ভুমিকা পালন করে।
আলকুশি + অশ্বগন্ধা মিশিয়ে খাওয়ার নিয়ম
আলকুশি ও অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম হলো একগ্লাস গরম দুধে আলকুশি বীজ পাউডার এবং অশ্বগন্ধা পাউডার ১ থেকে ২ চামচ ভালোভাবে মিশিয়ে খাওয়া। আবার রুটি বানানোর সময় আটা বা ময়দার সাথে আলকুশি + অশ্বগন্ধা মিশিয়ে রুটি করে খেতে পারেন। যদি গরম দুধ না থাকে তাহলে এক গ্লাস পানি দিয়ে আলকুশি + অশ্বগন্ধা মিশিয়ে খেতে পারেন।
আলকুশি বীজ চেনার উপায়
অনেকেই আছেন যারা আলকুশি বীজ চিনেন না। তাই আজকের আলকুশি বীজ চেনার উপায় বলে দিবো আপনাদের। আলকুশি বীজ দেখতে অনেকটা সিম এর বীজের মতই। গায়ের আবরণ কালো রঙের এবং একপাশে সাদা আকৃতির দাগ থাকে। ১০০ গ্রাম শুকানো আলকুশি বীজের ওজন মূলত ৫৫ থেকে ৮৫ গ্রাম হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন –
আলকুশি বীজের দাম
সাধারণ আলকুশি বীজের দাম ২০০ গ্রাম ১০০ টাকার মত হয়ে থাকে। তবে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন মূল্য হতে পারে। অনেকেই জানেন না আলকুশি বীজ কোথায় পাওয়া যাবে অথবা আলকুশি পাউডার কোথায় পাওয়া যায়। আপনি স্থানীয় বাজার থেকে আলকুশি বীজ সংগ্রহ করলে ২৫০ গ্রাম ১২৫ টাকায়ই পেয়ে যাবেন আশা করছি।
আলকুশি পাউডার এর অপকারিতা
আলকুশি বীজের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সমূহ ও অপকারিতা নিম্নোক্ত অংশে দেওয়া হলো।
- সাইকোসিস, নিউরোপ্যাথি, অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের চিকিৎসারত ব্যক্তিদের আলকুশি বীজ বা আলকুশি পাউডার খাওয়া উচিত নয়।
- গর্ভাবস্থায় আলকুশি খাওয়া যাবে না এতে বাচ্চার ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
- স্তন্যদানকারী মহিলাদের আলকুশি বীজ বা আলকুশি পাউডার খাওয়া উচিত নয়।
- লিভার সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের আলকুশি বীজ বা আলকুশি পাউডার খাওয়া উচিত নয়। এতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
- অতিরিক্ত আলকুশি বীজ বা আলকুশি পাউডার খেলে হ্যালুসিনেশন ও সিজোফ্রেনিয়ার এর সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে তাই সাবধান।
- আলকুশি বীজে ট্যানিন, ফেনল ইত্যাদি বিদ্যমান রয়েছে তাই এটা খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে শোধন করতে হবে।
পরিশেষে –
বিভিন্ন ঔষধি গুণাগুণ এর জন্য আলকুশি বীজ বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও নানা রোগের চিকিৎসার উপকরণ হিসেবে এর জুরি মেলা ভাড়। আলকুশি প্রাচীনকালে যেমন ব্যবহার হতো তেমনি বর্তমানে এটি ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। আলকুশি বীজের যেমন উপকারী দিক রয়েছে তেমনি অতিরিক্ত ব্যবহারে ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। এই পোস্টটি থেকে আপনারা আলকুশি বীজের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। তাই আমরা পরিমাণ মতো সেবন করার চেষ্টা করবো।