ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি ২০২৩, নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং শেখার উপায়

ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি ২০২৩ এবং নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং শেখার উপায় সহ মেয়েদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যই আজকের পোস্টের বিষয়বস্তু। ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে অনলাইনে আয় করার একটা মাধ্যম। এটা হচ্ছে এমন এক ধরনের পেশা যেখানে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে নিজের জন্য অথবা অন্য বিভিন্ন কোম্পানির জন্য কাজ করার মাধ্যমে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য নির্দিষ্ট অফিস অথবা নিজের ঘরে বসেই কাজ করা যায়।


এটি অন্যান্য চাকুরির মতই। তবে এখানে বেতন, ভাতা, নির্দিষ্ট সময়, বা চাপ কিছুই নেই। একজন ফ্রিল্যান্সার যেকোনো সময় যখন যেমন ইচ্ছা কাজ করতে পারবেন। তাই ফ্রিল্যান্সিং এখন সকলের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি ২০২৩, নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং শেখার উপায়
ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি ২০২৩


ফ্রিল্যান্সিং কি?

ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে একটি স্ব-কর্মসংস্থান। এটা একটা স্বাধীন বা মুক্ত পেশা। ঘরে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজ দেশ বা অন্য দেশের বিভিন্ন কোম্পানি বা ব্যাক্তির জন্য কাজ করে দেওয়া। অর্থাৎ ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ করে অর্থ উপার্জন করা হলো ফ্রিল্যান্সিং। এখানে স্বাধীনভাবে কাজ করা যায। ফ্রিল্যান্সিংয়ে ধরা বাঁধা নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। নিজের ঘরে বসেই এই কাজ করা যায়। ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে দেশের বাহিরের ক্লায়েন্টের কাজও করা যায়। দক্ষতা এবং ধৈর্য থাকলে এখানে কাজের অভাব হয় না।


ফ্রিল্যান্সিং কোন কাজের চাহিদা বেশি

ফ্রিল্যান্সিং এর বিস্তর সেক্টর রয়েছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের বেশি চাহিদা রয়েছে এমন কাজ গুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো:-

  • এসইও (SEO):
  • ডাটা এন্ট্রি
  • ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট
  • গ্রাফিক্স ডিজাইনিং
  • কনটেন্ট রাইটিং
  • ডিজিটাল মার্কেটিং
  • ট্রান্সলেশন
এছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং এর হাজার হাজার সেক্টর রয়েছে। এখানে কিছু সহজ বিষয় তুলে ধরা হলো।

এস ই ও (SEO)

Search Engine Optimization বা SEO হলো একটা ওয়েবসাইট কে উপরের র‌্যাংকে নিয়ে আসা অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিনের উপরে চলে আসবে। তাই ওয়েবসাইটের মালিকগণ SEO এক্সপার্টকে হায়ার করে। খুব ভালো করে এস ই ও শিখে নিলে মার্কেটপ্লেসে কাজের ভালো চাহিদা রয়েছে।


ডাটা এন্ট্রি

ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গঠন করতে চাইলে অবশ্যই দক্ষতা অর্জন করে নিতে হবে। এসবের মধ্যে ডাটা এন্ট্রি অন্যতম। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অথবা কোম্পানি তাদের নিজস্ব প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণ এবং ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের নানা তথ্য সংগ্রহ করতে অনলাইন থেকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য কালেক্ট করে থাকে। অর্থের বিনিময়ে এসব কাজ করানো হয়।

ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট

বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের সর্বোচ্চ শীর্ষে রয়েছে ওয়েব ডিজাইন এবং ডেভেলপমেন্ট। কারণ দেশে বা দেশের বাহিরে প্রতিটি কোম্পানিতে একাধিক ওয়েবসাইটের অথবা ওয়েবপেইজের প্রয়োজন হয়।


ওয়েবসাইট তৈরির পুরাতন মাধ্যম হচ্ছে কোডিং। এছাড়াও ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে তৈরি করা যায়। তবে কেউ যদি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বা ওয়েব ডিজাইনিং নিয়ে কাজ করতে চায় তাকে অবশ্যই লারাভেল পিএইচপি, যাভা স্ক্রিপ্ট, জেএসের কাজও খুব ভালো করে জেনে নিতে হবে।


গ্রাফিক্স ডিজাইনিং

ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য ডিজিটাল স্কিল গুলির মধ্যে গ্রাফিক্স ডিজাইন অন্যতম। এখানে ক্যারিয়ার গড়তে হলে এডোবি ফটোশপ, এডোবি ইলাস্ট্রেটর এর কাজগুলো খুব ভালো করে জানতে হবে।


মার্কেটিং, পণ্য ক্রয় বিক্রয়, ওয়েব ডিজাইন এবং ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর বিভিন্ন কাজে এবং অনলাইনে প্রায় প্রতিটি কাজে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর প্রয়োজন হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে লোগো, ব্যানার, ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ, ব্র্যান্ডিং, পাবলিশিং, এনিমেশন, প্রিন্ট ইত্যাদি ডিজাইনসহ আরো বিভিন্ন কাজ করা হয়ে থাকে।


কনটেন্ট রাইটিং

অডিও, ভিডিও, ছবি, ব্যানার, নিউজ, পোস্ট ইত্যাদি তৈরি করে ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছে দিতে বিভিন্ন মাধ্যম প্রয়োজন হয়। এবং এখান থেকে উপার্জন করা যায়।


এর সুন্দর উদাহরন হলো ইউটিবিং করা ও ব্লগ তৈরি করা। এসব ভিডিওগুলি চলমান অবস্থায় বিভিন্ন প্রেডাক্ট বা কোম্পানির এডভার্টাইজ দেখানো হয়। এর জন্য গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে আয় করা যায়। এর পাশাপাশি ইউটিউব এবং ফেসবুকেও বিভিন্ন কনটেন্ট ক্রিয়েট করে টাকা ইনকাম করা যায়।


এছাড়াও নিজে ব্লগিং করে আয় করা যায় অথবা গুগল ব্লগার ওয়েবসাইট বানিয়ে কনটেন্ট ক্রিয়েট করে ইনকাম করা যায়। যদি ব্লগ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তাহলে বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন প্রচারণা করেও আয় করা যায়।


ডিজিটাল মার্কেটিং

বর্তমান সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে নিজের পছন্দের জিনিস ক্রয় করতে মানুষ খুব পছন্দ করে। তাই অনলাইন প্রডাক্টের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 


অনলাইনে বিভিন্ন প্রোডাক্ট মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই হলো ডিজিটাল মার্কেটিং এর কাজ। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে নিজের পণ্য বিক্রি ও প্রচার ছাড়াও অন্যান্য কোম্পানির পণ্য প্রচার করে আয় করা যায়।



ট্রান্সলেশন

ফ্রিল্যান্সিং এর ডিজিটাল স্কিলের মধ্যে ট্রান্সলেশন হলো অর্থ উপার্জনের অন্য আরেক উপায়। এর মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষায় ট্রান্সলেশন করে খুব ভালো ইনকাম করা যাবে। এছাড়াও কিছু ফিন্যান্সিং স্কিলের নাম দেওয়া হল। যেমন:

  • সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট
  • অনলাইন কোর্স ক্রিয়েশন
  • ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
  • ব্লক চেন টেকনোলজি
  • আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)
  • ইথিকাল হ্যাকিং
  • এফিলিয়েট মার্কেটিং
  • সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং
  • মার্কেট রিসার্চ
  • মোবাইল অ্যাডভারটাইজিং
  • প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট
  • ভার্চুয়াল এসিস্ট্যান্ট
  • ডাটা সাইন্স
  • ই-কমার্স
  • কপিরাইটিং
  • মোবাইল অ্যাপ টেস্টিং

ফ্রিল্যান্সিং কি হালাল

ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে টাকা আয়ের ক্ষেত্রে ইসলামের কিছু বিধান হচ্ছে এটা কখনো বৈধ আবার কখনো অবৈধ। আপনি যে কাজটি করবেন সেটা যদি শরীয়তের দৃষ্টিতে হালাল হয় তবে উপার্জনও হালাল হবে। আবার যদি কাজটি হারাম হয় তবে উপার্জনটাও হারাম হবে।


আপনি যে প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করবেন তাদের কাজ ইসলামী পরিসীমার মধ্যে আছে কিনা দেখতে হবে। যেমন - নেশাদ্রব্য, মূর্তি, মৃত প্রাণী, শুকরের ব্যবসা, সুদ, ঘুষ, প্রতারণা, জুলুম ইত্যাদি সকল কাজের সাথে জড়িত কোন কাজ করলে উপার্জন হালাল হবে না।


নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং

নতুনদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং এ কিছু বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। যেমন-

  1. বেসিক কম্পিউটার জ্ঞান: ফ্রিল্যান্সিং এর শুরুতে আপনাকে অবশ্যই কম্পিউটারের বেসিক জ্ঞানগুলি জেনে রাখতে হবে। যেমন ওয়ার্ড, এক্সেল, টাইপিং, গুগল ড্রাইভ ইত্যাদি জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মোবাইল দিয়ে সকল সেক্টরের কাজ করা কখনোই সম্ভব নয়।
  2. ইন্টারনেট ব্যবহার: ফ্রিল্যান্সিংয়ে যেহেতু অনলাইনের মাধ্যমে কাজ দেওয়া নেওয়া হয় তাই ইন্টারনেট ব্রাউজিং, সার্চ ইঞ্জিন, কোন কিছু রিসার্চ করে সমাধান বের করার দক্ষতা এবং বিভিন্ন সফটওয়্যার এর কাজ সম্পর্কে জানা থাকা প্রয়োজন।
  3. ইংরেজি দক্ষতা: ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ পেতে, ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করত, মার্কেটপ্লেসে নিজের অবস্থান তৈরি করতে ইংরেজিতে দক্ষ হওয়া খুবই প্রয়োজন।
  4. কাজের ক্ষেত্র নির্বাচন: নিজের পছন্দ অনুযায়ী সেক্টর নির্ধারণ করে নিজের দক্ষতা বাড়িয়ে নেওয়া খুব জরুরী। এলোমেলো কাজ মানুষকে ব্যর্থতায় পৌঁছে দিতে পারে।
  5. নিশ নির্ধারণ: পছন্দের সেক্টরের ভেতরে আবার অনেকগুলো ভাগ রয়েছে। সেখানে থেকে একটা সিলেক্ট করে নেওয়া। যেমন– গ্রাফিক্স ডিজাইনের ভেতরে রয়েছে লোগো, ব্যানার, টি-শার্ট, ফ্লায়ার ডিজাইন। এটা মার্কেটপ্লেসে নিজেকে এক্সপার্ট হিসেবে তুলে ধরতে সাহায্য করবে।
  6. দক্ষতা বৃদ্ধি ও চর্চা করা: পছন্দের সেক্টরের পছন্দের নিশে এবার দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ধৈর্য সহকারে চর্চা করে যাওয়া।
  7. অনলাইনে একাউন্ট তৈরি: Fiverr, Upwork, Freelancer.com, Elance.com, Guru, PeoplePerHour ইত্যাদি হল আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেস। Balancer বাংলাদেশী মার্কেটপ্লেস। এসবে নিজের একাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে।
  8. গিগ তৈরি: দক্ষতার প্রমাণস্বরূপ কিছু কাজ আপনার প্রোফাইলে আপলোড দিতে হবে যাতে বায়ার এগুলো দেখে আপনার কাজ যাচাই করতে পারে।
  9. সেল্ফ মার্কেটিং: নিজের প্রোফাইলে আপলোডের পাশাপাশি নিজের মার্কেটিং করতে হবে। আবার সোশাল মিডিয়ায় বা কাছের মানুষদের কাছে এসব প্রকাশ করতে হবে।
  10. ক্লায়েন্ট/ বায়ার খুঁজে পাওয়া: এর জন্য ধৈর্য রাখতে হবে। প্রথমে কখনো বায়ার পেলে আপনি কাজের মাধ্যমে তাকে খুশি করাতে পারলে পরবর্তী কাজ হয়তো আপনাকে দিয়েই করাতে পারে। আবার অন্যকে রেফার করতে পারে।
  11. কাজের জন্য আবেদন করবেন যেভাবে: বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে নিজের একান্তই করতে হয়। এরপর বায়াররা কাজের পোর্টফোলিও দেখে কয়েকজন ফ্রিল্যান্সার কে বিড ইনভাইটেশন পাঠিয়ে থাকে। এভাবে আগ্রহীরা আবেদন করে মূল্য, কাজ দেওয়ার সময়, বায়ার কেন আপনাকে কাজটি দেবে তা উল্লেখ করতে হয়। এভাবে ক্লায়েন্ট বিডটি গ্রহণ করে পর্যালোচনার মাধ্যমে কাজ দিয়ে থাকে।
  12. কাজের মূল্য নির্ধারণ করা: আন্তর্জাতিক মার্কেটে নতুনদের জন্য নূন্যতম ৫ ডলার থেকে শুরু হয়। দেশীয় মার্কেটে ১৫০-২০০ টাকা থেকে শুরু হয়। তবে দক্ষতা বাড়ার পাশাপাশি টাকার পরিমাণ বাড়তে থাকে।
  13. পেমেন্ট গ্রহণ করা: ব্যাংক থেকে ব্যাংক বা সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিং বা নিচের মাধ্যমে পেমেন্ট নেওয়া যায়।

  • paypal
  • Skrill
  • Freelancer debit card
  • Payoneer

ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে। আপনি আপনার ক্লায়েন্টের সাথে আলোচনা করে আপনার জন্য যা সহজ হবে তা আপনি গ্রহণ করুন।


Read More:


পরিশেষে

অনলাইনের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করে ঘরে বসে উপার্জন করাটা খুব লাভজনক। কারণ এখানে কাজের কোন অভাব নেই। নিজের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো সেক্টরে কাজ করা যায়।


শুধু প্রয়োজন ধৈর্য ধারণ এবং নিজের দক্ষতা অর্জন করা। সবার প্রথমে নিজের কাজে দক্ষতা অথবা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে যাতে নিজেকে এক্সপার্ট হিসেবে প্রকাশ করা যায় এবং সহজেই কাজ করা যায়। ফ্রিল্যান্সিং এ সঠিক পথে এগিয়ে গেলে যে কেউ সফলতা অর্জন করতে পারবে।

Globalic World

Globalic World Is One Of The Best Education And Technology Based Knowledge Sharing Site In Bangladesh.

Post a Comment

Previous Post Next Post