খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সহ খেজুর খাওয়ার নিয়ম জানুন

সকালে খেজুর খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকার এটি আমাদের নবী করীম সাঃ এর পছন্দের একটি খাবার। সকালে ব্যায়াম করার আগে খেজুর খেলে সারা দিনের ক্লান্তি ভাব দূর করতে সহায়তা করে। সারাদিনের শক্তি সঞ্চয় করতে খেজুরের বিকল্প নেই। ছোট বড় সবাই খেজুর খুব পছন্দ করে। খেজুরে প্রচুর আয়রন রয়েছে যা হিমোগ্লোবিনের লেভেল বাড়াতে সাহায্য করে।

খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সহ খেজুর খাওয়ার নিয়ম জানুন
খেজুর খাওয়ার উপকারিতা


খেজুর খাওয়ার নিয়ম

আসুন খেজুর খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:-
  • ঘুম থেকে ওঠার পর আমরা অনেকেই শুকনা খেজুর খেয়ে থাকি। যদি খেজুরটা রাতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে সেই পানিসহ খেজুর খাওয়া হয়। তাহলে সারাদিনের ক্লান্তি ভাব দূর করতে সাহায্য করবে এবং খেজুর  কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।
  • সারাদিন কাজ করতে করতে শরীর দুর্বল হয়ে আসতে পারে যদি দুই একটা খেজুর খাওয়া হয় তাহলে এই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
  • যাদের ব্লাডে সুগার লো আছে তারা চিনির বদলে খেজুর খেলে এই সমস্যা থেকে সহজে মুক্তি পেতে পারেন। কারণ খেজুরে থাকা উপাদান শরীরে কোলেস্টেরল সামঞ্জস্য রাখতে সহায়তা করে।
  • যাদের ওজন কম তারা প্রতিদিন কয়েকটা খেজুর খেতে পারেন খেজুরে থাকা শর্করা প্রোটিন আমিষ ক্যালরি আপনার ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
  • ব্যায়াম করলে অথবা অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে শরীর থেকে ঘাম ঝরে। এতে শরীরের ঘামের সাথে প্রয়োজনীয় উপাদান বের হয়ে শরীরকে দুর্বল করতে পারে। তাই ব্যায়াম করার আগে কিংবা কাজে যাওয়ার আগে অবশ্যই কিছু খেজুর খেলে আপনার এই অপূর্ণতা দূর হয়ে যাবে।

খেজুরের গুড়

খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে ঘন করে কিছু প্রসেসের মাধ্যমে খেজুরের গুড় তৈরি করা হয়। খুবই সুস্বাদু এবং অত্যন্ত মিষ্টি খেজুরের গুড় সকলেরই খুবই পছন্দের একটি খাবার। বাংলাদেশের সাধারণত পৌষ- মাঘের দিকে এই খেজুরের গুড় তৈরি করার ধুম পড়ে যায়। খেজুরের গুড় দ্বারা তৈরিকৃত খাবার বাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে ঐতিহ্য বহন করে আসছে যুগ যুগ ধরে। ফিরনি, পায়েস, গুড়ের সন্দেশ, এমনকি এই গুড় দ্বারা তৈরিকৃত পিঠাপুলি সকলের খুবই পছন্দনীয় খাবার।

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় যেমন নিজের প্রতি খেয়াল রাখতে হয় ঠিক তেমনি খাওয়ার প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে কারণ গর্ভাবস্থায় সকল নারী যদি সচেতন থাকেন তাহলে তার গর্ভের শিশুটিও সুস্থ এবং স্বাভাবিক থাকবে। গর্ভাবস্থায় যে সকল শুকনো খাবার খাওয়া হয় তার মধ্যে খেজুর সবচেয়ে বেশি উপকারী। গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারতি নিচে আলোচনা করা হলো:-

  • গর্ভাবস্থায় খেজুর ফাইবারের কাজ করে যেটি খাবার হজম করে কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর করতে সহায়তা করে।
  • খেজুরে থাকা ভিটামিন এ ও সি শিশুর দাঁত মজবুত এবং হাড়ের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ভ্রুনের বৃদ্ধি ঘটায় এবং দৃষ্টিশক্তি প্রখর করতে সহায়তা করে।
  • এ সময় হার্ট এবং স্ট্রোকের ঝুঁকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। খেজুর খাওয়ার ফলে এর মধ্যে থাকা পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে আপনাকে এ সকল ঝুঁকি থেকে নিয়ন্ত্রণ করবে।
  • খেজুর গর্ভাবতী নারীর জরায়ুর দেয়াল মজবুত করে এবং গর্ভপাতের সম্ভাবনা কমায়।

Read More:

খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

বহু গুণে গুণান্বিত খেজুর শরীরে বহু রোগ প্রতিরোধ করে। খেজুর রোগ নিরাময়কারী মহা ঔষধ বলা যেতে পারে। খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:-

খেজুরের উপকারিতা

  • হজম শক্তি বৃদ্ধিতে খেজুরের বিকল্প নেই।
  • খেজুর শরীরে শর্করার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে সহযোগিতা করে।
  • কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
  • মস্তিষ্কের বিকাশ গঠন করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
  • চুল এবং ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
  • দাঁত এবং হাড় মজবুত করতে সহযোগিতা করে।
  • পানি শূন্যতা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • দৃষ্টিশক্তি প্রখর করতে সহযোগিতা করে।
  • পুরুষের বল ও শক্তি বৃদ্ধি সহায়তা করে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • হার্টের সুস্থতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

খেজুরের অপকারিতা

  • কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয় মিষ্টি এই ফল বেশি বেশি খাওয়ার ফলে অনেকে মোটা হয়ে যেতে পারেন। 
  • যাদের ডায়াবেটিক্স আছে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া তাদের কখনোই বেশি বেশি মিষ্টি জাতীয় এই খেজুর খাওয়া উচিত হবে না।

খেজুর গাছ

লম্বা শাখা হীন গাছ বলতে নারকেল, সুপারি, তাল এবং খেজুর গাছকে আমরা জানি। শাখা বিহীন হওয়াতে গাছটি লম্বা অথবা মাঝারি আকারে হয়ে থাকে। খেজুর গাছ সাধারণত মরু অঞ্চলের বৃক্ষ। 

সৌদি আরব, ইরান, ইরাক ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এই বৃক্ষ বেশি দেখা যায়। এছাড়াও ভারত পাকিস্তান ও বাংলাদেশে কম সংখ্যক এই গাছের দেখা মেলে। মাথার কাছে একগুচ্ছ ডাল নিয়ে এই খেজুর গাছ এককভাবে দাঁড়িয়ে থাকে।


মরিয়ম খেজুর

খেজুর সকলের কাছে খুব জনপ্রিয় একটি সুমিষ্ট ফল। মুসলমানদের কাছে এই ফলটির চাহিদা এবং কদর বেশি। আমাদের নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি, প্রতিদিন সাতটা করে খেজুর খাওয়ার কথা বলে গেছেন। পুষ্টিগণের সমৃদ্ধ খেজুরে খাদ্য তালিকার সকল উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। আমরা কত প্রকারেরই তো খেজুর খেয়ে থাকি তার মধ্যে সবচেয়ে সুস্বাদু এবং জনপ্রিয় মরিয়ম খেজুরের নাম শোনেনি এমন লোক পাওয়াই দুষ্কর।

সকল গুন সমৃদ্ধ মরিয়ম খেজুর খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। গবেষণায় দেখা গেছে শুকনো খেজুরের মধ্যে মরিয়ম খেজুর সবচেয়ে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল। এই খেজুরে আছে আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন- এ, ভিটামিন- সি এবং ভিটামিন- কে, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ফাইবার, কোলেস্টেরল এবং ফ্যাট ও প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি।


আজওয়া খেজুরের উপকারিতা

সব ধরনের খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ ফল হিসেবে আজওয়া খেজুরের উপকারিতা এক/দুই কথাতে বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ নিজের হাতে মক্কা নগরীর মাটিতে যে খেজুর গাছ রোপন করে গিয়েছিলেন, ওই খেজুর গুলোকে আজওয়া খেজুর নামে আমরা সকলেই চিনি। অনেক গুণের অধিকারী এই আজওয়া খেজুর মানুষের শরীরের উপকারের জন্য খুবই দরকারী এবং উপকার সমৃদ্ধ ফল। আজওয়া খেজুর খেলে কি কি উপকার হতে পারে আলোচনা করা হলো।


আজওয়া খেজুরের উপকারিতা:-
  • শর্করা, আমিষ ও প্রোটিনের আভাব পূরণ করে।
  • কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে খেজুর।  এটি শরীল সুস্থ রাখতে সহায়ক। 
  • দাঁত, চুল ও হাড়ের মজবুত এবং বিকাশের সহযোগিতা করে।
  • স্ট্রোকের ঝুঁকি এবং হার্টের সমস্যা দূর করে।
  • গর্ভবতী নারীদের জন্য খুবই উপকারী।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • সারাদিনের ক্লান্তি ভাব এবং দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে
  • মস্তিষ্ক বিকাশের সহায়তা করে।

আজওয়া খেজুরের দাম

আজওয়া খেজুর সৌদি আরবের থেকে আমদানিকৃত খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খেজুর। বাজারে আজওয়া খেজুরের কত দাম তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

পন্যের নাম পরিমাণ বাজার মূল্য
আজওয়া খেজুর
১ কেজির দাম৮০০-২৫০০টাকা
আজওয়া খেজুর
৫ কেজির দাম৪০০০-১২৫০০টাকা
আজওয়া খেজুর
১০ কেজির দাম৮০০০-২৫০০০টাকা
আজওয়া খেজুর
৫০ কেজির দাম৮০,০০০-২৫০০০০টাকা
আজওয়া খেজুর
১০০ কেজির দাম৮০০০০০-২,৫০,০০০০টাকা

এই হচ্ছে আজওয়া খেজুরের বাজার মূল্য। তবে বাজারমূল্য যাই হোক না কেন। নিয়মিত আজওয়া খেজুর আপনার দেহ ও সুন্দর স্বাস্থ্য গঠনে বেশ ভূমিকা পালন করে।


পরিশেষে

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করেছি খেজুর খেলে শরীরের পুষ্টিগুণের কোন ঘাটতি অবশিষ্ট থাকে না। সকলেই খুব পছন্দনীয় একটি ফল যার চাহিদা বহু যুগ আগে থেকে সকলের ছিল এবং থাকবে। আমরা সকলেই বেশি বেশি করে খেজুর খাই, পুষ্টিগুণের সমৃদ্ধ হই এবং সুস্থ থাকার চেষ্টা করি।

Globalic World

Programmer | Content Creator | Learner

Post a Comment

Previous Post Next Post